আসুন আল আকসা মসজিদ সম্পর্কে কিছু ইতিহাস লক্ষ্য করে নিই একনজরে
১৯১৫ সালে জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদের বাইরে অটোমান সেনারা
আল আকসা হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম মসজিদ। মুসলমানদের প্রথম কেবলা। হিজরতের পর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে নতুন কেবলা হয় ‘কাবা শরীফ’। আল আকসা মসজিদের অর্থ হচ্ছে ‘দূরবর্তী মসজিদ’। এই মসজিদটি পূর্ব জেরুজালেমে বা বায়তুল মোকাদ্দাসে অবস্থিত।
এ পবিত্র মসজিদ থেকেই রাসূল (সা.) উর্ধাকাশে তথা মেরাজ গমন করেছিলেন। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেছেন, “সকল মহীমা তাঁর যিনি তাঁর বান্দাকে এক রাতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন, যার চতুর্পার্শ্বকে আমি বরকতময় করেছি। (আর এই ভ্রমণ করানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে) যাতে আমি আমার নিদর্শন তাকে প্রদর্শন করি।” (সুরা বনী ইসরাইল: আয়াত ১)
হযরত ইবরাহিম (আ) কর্তৃক কাবা গৃহ নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আ.) আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে হযরত সুলাইমান (আ.) এই মসজিদটির পূণর্নির্মাণ করেন। নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা (আঃ) সহ অনেক নবীর দ্বারা এক আল্লাহকে উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে এসেছে।
৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র বায়তুল মোকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসার পর মুসলমান শাসকরা কয়েকবার এ মসজিদের সংস্কার করেন। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের যুগে মসজিদটি পুনর্নির্মিত ও সম্প্রসারিত হয়। এই সংস্কার ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে তার পুত্র খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের শাসনামলে শেষ হয়। ৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ভূমিকম্পে মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর এটি পুনর্নির্মাণ করেন। পরে তার উত্তরসুরি আল মাহদি এর পুনর্নির্মাণ করেন। ১০৩৩ খ্রিষ্টাব্দে আরেকটি ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফাতেমীয় খলিফা আলি আজ-জাহির পুনরায় মসজিদটি নির্মাণ করেন যা বর্তমান অবধি টিকে রয়েছে।
কিন্তু ১০৯৬ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেয়ার পর আল আকসা মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গীর্জায় পরিণত করে। তারা মসজিদের গম্বুজের উপরে ক্রুশ স্থাপন করে এর নাম রাখে ‘সুলাইমানি উপাসনালয়’।
এরপর ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম অধিকার করার পর পূর্বের নকশা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদের পুণর্নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গমিটার। আর এ মসজিদে পাঁচ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।
বর্তমানে “আল-আকসা” মসজিদ বলতে বোঝায় কিবলি মসজিদ, মারওয়ানি মসজিদ ও বুরাক মসজিদ (৩টির) এর সমন্বয়, যা “হারাম আল শরীফ” এর চার দেয়াল এর মধ্যেই অবস্থিত।
বর্তমানে ইহুদিবাদী ইসরাইল এই ঐতিহাসিক মসজিদটি দখল করে রেখেছে।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট ইহুদিবাদীরা অস্ট্রেলীয় পর্যটক ডেনিস মাইকেল রোহান কর্তৃক একবার আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগও করেছিল। রোহান ওয়ার্ল্ডওয়াইড চার্চ অফ গড নামক এভাঞ্জেলিকাল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মসজিদের ভিত্তি দুর্বল করার জন্য মসজিদের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের দেয়ালের বাইরে খননকার্য শুরু করে।
১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে গুশ এমুনিম আন্ডারগ্রাউন্ড নামক সংগঠনের সদস্য বেন শোশান ও ইয়েহুদা এতজায়ন আল-আকসা মসজিদ ও কুব্বাত আস সাখরা উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ জানুয়ারি ইসরায়েলি সেনারা মসজিদের বাইরে বিক্ষোভকারীদের উপর রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং এতে ৪০ জন মুসল্লি আহত হয়।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ৮ অক্টোবর দাঙ্গায় ইসরায়েলি সীমান্ত পুলিশ কর্তৃক ২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হয়। টেম্পল মাউন্ট ফেইথফুল নামক ইহুদি ধর্মীয় গোষ্ঠী তৃতীয় মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করতে যাচ্ছে ঘোষণা করলে এই প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল।
২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এরিয়েল শ্যারন এবং লিকুদ পার্টির সদসরা ১০০০ সশস্ত্র রক্ষীসহ আল-আকসা চত্বর পরিদর্শন করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি সরকার মসজিদে ২,০০০ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করে। জুমার নামাজের পর একদল ফিলিস্তিনি মসজিদ ত্যাগ করার পর পুলিশের উপর পাথর নিক্ষেপ করে। পুলিশ এরপর মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করে গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে ফলে চারজন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হয়।
২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আবার প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের অণুসন্ধানের ওজুহাতে খননকার্য পুনরায় শুরু করে।
সেই বছরের ২৩ জুলাই, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আল আকসা মসজিদে মেটাল ডিটেক্টর বসায় এবং ৫০ বছরের কম বয়সীদের সেখানে ঢোকা নিষিদ্ধ করে। তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে পন্থা বদলেছে কিন্তু নিজেদের লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি ইসরাইল।
৮ ই মে ২০২১আল-আকসা মসজিদে জেরুজালেমে সংঘর্ষে দেড় শতাধিক মানুষ আহত হন পবিত্র রমজান মাসে এই সংঘর্ষ ব্যাপক চর্চিত বর্তমান মুসলিম বিশ্বে।
No comments