টিপু সুলতান ফ্যাক্টসঃ
টিপু সুলতান ফ্যাক্টসঃ
আঠারো শতকের মহীশুরের শাসক শের-এ-মহিশুর টিপু সুলতান ভারতবর্ষের নিকট অতীতের সবচেয়ে জনপ্রিয়, ক্যারিশমাটিক শাসক। টিপু নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম ফাতেহ আলি খান।
১) টিপু ইংলিশ, ফ্রেঞ্চ, পার্সিয়ান, আরবি,উর্দু সহ মোট ৬ টি ভাষাইয় পারদর্শী ছিলেন এবং অনর্গল কথা বলতে পারতেন।
২) রকেট অর্থাৎ যুদ্ধে ব্যাবহৃত মিসাইলের আবিষ্কারক টিপু সুলতান। টিপু'র মৃত্যুর পর তার ল্যাবরেটরি নমুনা নিয়ে ইংরেজরা অধিক গবেষনা করে এই প্রযুক্তি আয়ত্ব করে এবং ইউরোপে পরিচিতি পায়।
৩) টিপু'র শাসক হবার কোনও লক্ষ্য, ইচ্ছা ছিলোনা। তার বাবা হায়দার আলি ছিলেন যোদ্ধা, ট্রু সোলজার। তিনি চেয়েছিলেন টিপু-কে আউলিয়া হিসেবে গড়ে তুলতে। টিপু ছিলো উচ্চশিক্ষিত, বিদ্বান। কিন্তু হায়দারের মৃত্যুর পর ইংরেজদের আগ্রাসন থেকে মাতৃভুমিকে বাঁচাতে হাতে অস্ত্র তুলে নেন। উল্ল্যেখ্য হিন্দুস্তানের প্রতি তার ছিলো অপরিসীম ভালোবাসা, মাতৃভুমিকে টিপু অত্যাধিক পবিত্র জ্ঞান করতেন।
৪) টিপু অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন কিন্তু উদার এবং অসাম্প্রদায়ীক। রাজ্যের সকল হিন্দু/বুদ্ধ মন্দির সুলতানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নিয়মিত অর্থ এবং সকল সহায়তা পেত। তার দরবারে সব ধর্মের সভাসদ ছিলো।
৫) স্বজনপ্রীতির উর্ধ্বে। নিজে মুসলিম বলে অপরাপর মুসলিম শাসকদের প্রতি আলাদা পক্ষপাতিত্ব ছিলোনা। যেমন হায়দারাবাদের নিজামকে শত্রু জ্ঞান করতেন কেননা তারা হিন্দুস্তানের সাথে বেইমানি করে ইংরেজের সাথে হাত মিলায়।
৬) শাসক এবং যোদ্ধা হিসেবে দূরদর্শী। ইংরেজ আগ্রাসনের পালটা ব্যাবস্থা হিসেবে ফ্রেঞ্চ এবং অটোমান সম্রাজ্যের সাথে মইশোর-এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করেন। ইংরেজদের সম্ভাব্য আক্রমন প্রতিহত করতে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। কিন্তু নানা কারনে প্রয়োজনের মুহুর্তে কেউই সাহায্য দিতে পারেনি। (উল্ল্যেখ্য, মইশোরে ইংরেজ আক্রমনের সময় কাকতালীয় ভাবে কাবুলের জামান শাহ তখন ব্যাস্ত পারসিয়ান সাফভিদা আক্রমন ঠেকাতে, অটোমান তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরি'র আক্রমনে আক্রান্ত আর ফ্রান্সে তখন ফরাসি বিপ্লব)।
৭) সাহসী এবং আপোষহীন। অল্প কজন সৈন্য নিয়ে যখন শ্রীরঙ্গপত্তম দুর্গে কয়েক হাজার সৈন্যের বিশাল ইংরেজ বাহিনীর আক্রমনে পড়েন, তখনও আত্মসমর্পনের অনুরোধ প্রত্যেখ্যান করেন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনে বীরের মত শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়াই করেন। মইশোরে অবস্থান করা বন্ধু এক ফ্রেঞ্চ জেনারেল অনুরোধ করেন গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যেতে। টিপু তাকে উত্তর দেন, "One day of life as a Tiger is far better than thousand years of living as a Sheep".
৮) ফরাসি সম্রাট নেপলিয়ান বোনাপার্টের সাথে টিপুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। আর ব্রিটিশদের কাছে দু'জনই ছিলেন আতঙ্ক। দুজনে খ্যাত ছিলেন ইউরোপের বাঘ আর ভারতের বাঘ। পরিকল্পনা ছিলো এলাইড বাহিনী গঠন করে দুই প্রান্ত থেকে ইংরেজদের আক্রমন করা। টিপু'কে পাঠানো নেপলিয়ানের একটা গোপন পরিকল্পনার চিঠি মাঝপথে ব্রিটিশ গুপ্তচরের কাছে ফাঁস হয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
৯) টিপু সুলতান শহিদ হয় ১৭৯৯ সালে, উনপঞ্চাশ বছর বয়েসে। রাজ্য শাসন করেছেন ১৭ বছর। তিনি কোনও নির্বাচিত রাজা ছিলেননা বটে, কিন্তু টিপু শহিদ হবার পর সমগ্র রাজ্যে হাহাকার বয়ে যায় সেটা যে কেবল ব্রিটিশদের হাতে স্বাধীনতা হরণের জন্য, তা নয়, বরং টিপু'র মত জনদরদী শাসক হারিয়ে। এতেই বোঝা যায় প্রজাদের মাঝে টিপু'র কি বিপুল জনপ্রিয়তা ছিলো!
No comments