জানুন ভারতবর্ষের প্রথম সাহাবী ও মসজিদের ইতিহাস! - খবর দিনভর

Weather (state,county)

Breaking News

জানুন ভারতবর্ষের প্রথম সাহাবী ও মসজিদের ইতিহাস!


খবর দিনভর ডেস্কঃ- প্রথম ভারতীয় সাহাবী হযরত তাজউদ্দীন চেরামান পেরুমল (রাঃ) হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর চন্দ্র দ্বি-খন্ডনের মুজেজার ইন্ডিয়ান সাক্ষী ভারতীয় সাহাবী তাজউদ্দীন রাঃ এর কবর চেরামান পেরুমল উপমহাদেশের সর্বপ্রথম নাগরিক যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন ও মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পবিত্র সাহচর্য লাভ করে সাহাবী হবার গৌরব অর্জন করেন। উনার নিবাস ছিল ভারতের বর্তমান কেরালা প্রদেশের মালাবার অঞ্চলের ’Kodungaloor কোডুঙ্গোলর এলাকায়। উনি উক্ত অঞ্চলের সম্রাট ছিলেন। একাধারে ২৬ টি বৎসর তিনি রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পুরো দক্ষিণ ভারতের ২৫০০ মাইলেরও বেশী এলাকা জুড়ে উপকুলীয় রাজ্যের সীমানা ছিল বিশাল। অনেক ঐতিহাসিক উনার ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রাচীন বইয়ের মধ্যে এম. হামিদুল্লাহ রচিত “মুহাম্মাদ রসূলুল্লহ” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

‘চক্রবতী ফারমাস’ যা চেরামান পেরুমল এর অন্য একটি উপাধি নিজ অঞ্চলে থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা বা অলৌকিক ঘটনা স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেণ। পবিত্র কোর’আনের সূরা-ক্বমারে এই চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজার কথা উল্লেখ আছে। তাফসিরে মা’আরিফুল কোর’আনে উক্ত সূরার ব্যাখ্যায় এই পূন্যাত্মা সাহাবীর ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কথা উল্লেখ আছে। ওখানে আরো বলা আছে যে, মালাবারের এই মহারাজা ডায়েরী লিখতেন। যেদিন এই চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা সংগঠিত সেই, উনি সেইদিনের ঘটনা সবিস্তারে তারিখ সহ লিখে গেছেন। উনার রচিত সেই ডায়েরী এখনও সংরক্ষিত আছে। 

মক্কার কাফেরদের দাবীর মুখে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাঃ  হাতের ইশারায় চাঁদকে দিখন্ডিত করে দেখান। চাঁদের একটা অংশ আকাশের পূর্বাংশে আর অপরাংশ পশ্চিম দিকে সরে যায় কিছুক্ষণের জন্য। উপস্থিত অনেকেই সে রাতে এ দৃশ্য দেখেছিল। কাফেরদের কেউ কেউ এটা বিশ্বাস করলেও নিজের চোখে দেখা সত্ত্বেও কেউ কেউ তা যাদু হিসেবে অভিহিত করে।জোৎস্নারাতে রাজা চেরুমল রাজপ্রসাদের ছাদে বসে ছিলেন রাণী সাথে করে। হঠাৎ চাঁদকে দ্বিখন্ডিত হতে দেখে রাণীসহ তিনি ও তার সভাসদরা যারপরনাই বিষ্মত হন। এ বিষয়ে তিনি রাজজ্যোতিষীদের কাছে জানতে চান। মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই মালাবার উপকুলে আগত আরব বণিকদের মাধ্যমে স্থানীয় আরব বণিক ও তাদের ভারতীয় দোসররা জানতে পারেন যে,

আরবে এক নবী আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি একত্ববাদ প্রচার করেন তিনিই নিজ হাতের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন। এ কথা শুনে অভিভূত রাজা চেরামান পেরুমল আরবের সেই নবীর সাথে স্বাক্ষাতের জন্য মরীয়া হয়ে ।উঠেন শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন একদল আরব বণিকদের সাথে। হিজরতের পূর্বে সম্ভবত ৬১৯-৬২০ খৃষ্টাব্দে ২৭ শে শাওয়াল সকাল নয়টার দিকে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে তাঁর দেখা হয়। সেখানেই তিনি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বক্কর রাঃ সহ আরও কয়েকজন সাহাবীর উপস্থিতিতে স্বয়ং আল্লাহর হাবীব সাঃ তার নাম রাখে তাজউদ্দীন। রাজা চেরামান পেরুমল রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জন্য উপঢৌকন হিসেবে দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত আচার নিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতীয় এক বাদশাহ কর্তৃক আদার সংমিশ্রণে তৈরী সেই আচার সংক্রান্ত একটা হাদিসও আমরা দেখতে পাই। প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাইদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে হাদিসটি। হাদীস সঙ্কলনকারী হাকিম (রঃ) তার ‘মুস্তাদরাক’ নামক কিতাবে হাদীসটি সঙ্কলন করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) চেরামান পেরুমল (রাঃ) কে ‘মালিকুল হিন্দ’ তথা ‘ভারতীয় মহারাজ’ বলে

সম্বোধন করেন।

ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻯ ( ﺭﺿﻰ ﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) ﻗﺎﻝ ﺍﻫﺪﻯ ﻣﻠﻚ

ﺍﻟﻬﻨﺪ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) ﺟﺮﺓ ﻓﻴﻬﺎ ﺯﻧﺠﺒﻴﻞ

ﻓﺎﻃﻌﻢ ﺍﺻﺤﺎﺑﻪ ﻗﻄﻌﺔ ﻗﻄﻌﺔ ﻭﺍﻃﻌﻤﻨﻰ ﻣﻨﻬﺎ ﻗﻄﻌﺔ

[ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻤﺴﺘﺪﺭﻙ ﺣﺎﻛﻢ ]

হযরত আবু সাঈদ সা’দ বিন মালিক বিন সিনান আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত ‘ভারতীয় মহারাজ নবীজী (সাঃ) এর জন্য এক বয়াম আচার নিয়ে আসলেন যার মধ্যে আদার টুকরা ছিল। নবীজী (সাঃ) সেই টুকরাগুলা তার সাহাবীদের ভাগ করে দিলেন। আমিও খাবার জন্য একটি টুকরা ভাগে পেয়েছিলাম’। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত মালিক ইবনে দীনারের বোন রাজিয়া’র সাথে রাজা পেরুমল তথা সাহাবী তাজউদ্দীন রাঃ এর বিয়ে হয়। তিনি সেখানে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ বৎসর অবস্থান করে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নির্দেশে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তার সাথে মালিক ইবনে দীনারসহ আরও ক’জন সাহাবী ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে দক্ষিণপূর্ব আরবের এক বন্দরে (বর্তমান ওমানের সালালা শহর) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন। আজও তার কবর রয়েছে ওমানের সালালা শহরে মর্যাদাবান এক সাহাবী হিসেবে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সেটি এক

অনবদ্য আকর্ষণ। ওদিকে মালিক ইবনে দিনার রাঃ এবং তার বোন রাজিয়া রাঃ সহ অন্যান্য মুসলমানগণ ঠিকই কেরালাতে আসেন মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে চেরুমান পেরুমল তথা তাজউদ্দীন রাঃ তার আত্বীয়স্বজনদের কাছে চিঠি লিখে পাঠান সাহাবী মালিক ইবনে দিনারের হাতে।সাহাবী মালিক ইবনে দিনার তার বোন রাজিয়া দলবল সহ কেরালায় আসেন এবং এখানেই তারা বসতী স্থাপন করেন। এর আগে থেকেই সেখানে এক বিরাট আরব বণিকদের বসতী গড়ে উঠেছিল। সাহাবী মালিক ইবনে দিনার রাঃ সেখানে ভারতের প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন। সেখানেই এই মহান সাহাবী ও তার বোন হযরত রাজিয়া রাঃ এর কবর আজও বিদ্যমান রয়েছে।


সুত্র :- গুগল ক্রম ও উইকেপেডিয়া।

No comments